গ্রাম বাংলার মেঠো পথে সাইকেল চালক
— একটি নৈসর্গিক চিত্র ও জীবনের গল্প
বাংলার গ্রাম মানেই সবুজের সমারোহ, খোলা আকাশ আর দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ধানখেতের মাঝে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। সেই পথে ভোরের কুয়াশা ভেদ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে এক নিঃশব্দ বাহন—সাইকেল। চালকের পায়ে ঘূর্ণায়মান প্যাডেল আর মাটির সাথে গভীর সংযোগে তৈরি হয় এক অনন্য জীবনচিত্র।
সাইকেল চালকটি হতে পারে একজন চাষি, বাজারে ফসল পৌঁছে দিতে রওনা দিয়েছেন ভোর হতেই। কখনো সে একজন গ্রামের হোমিওপ্যাথ ডাক্তার, যিনি রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আবার কখনো সে হয়তো একজন স্কুল শিক্ষক, যিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়মতো বিদ্যালয়ে পৌঁছান তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য।
মেঠো পথের ধুলো, কাদা, কিংবা ছোট ছোট ইটের টুকরো—সব কিছুই যেন সাইকেল চালকের জীবনের অংশ। তার ক্লান্তি নেই, অভিযোগ নেই। প্রতিদিনের জীবিকার টানে কিংবা দায়িত্ববোধে সে এগিয়ে চলে চুপচাপ। ছায়াঘেরা আমগাছের নিচ দিয়ে, সরু বাঁশবনের পাশ কাটিয়ে সে এগিয়ে চলে জীবনের নিরন্তর গতিতে।
সাইকেলের ক্যারিয়ারে বাঁধা থাকে বাজারের থলে, স্কুলব্যাগ, কিংবা কখনো একটি ছোট শিশু। অনেক সময় স্ত্রীকে নিয়েও সে মেঠো পথে চলতে থাকে হাসিমুখে। দুই পাশে কচুপাতা ভেজা জল, মাঝখানে সরু রাস্তা—এই রাস্তায় তার চলা কখনোই থেমে যায় না।
এই সাইকেল চালক শুধু একজন ব্যক্তি নয়, সে হলো গ্রামীণ জীবনের প্রতীক। তার চলার মাঝে রয়েছে অধ্যবসায়, সাদামাটা জীবনের সৌন্দর্য, এবং প্রকৃতির সাথে এক অদ্ভুত মিলেমিশে থাকার গল্প। আধুনিকতার ভিড়ে হয়তো এখন অনেকেই বাইক বা মোটরসাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন, তবে আজও গ্রামের অনেক প্রান্তে সেই চেনা সাইকেলের কুয়াশা কাঁটা চাকা ঘোরে নীরবে।
উপসংহার
গ্রাম বাংলার মেঠো পথে সাইকেল চালক এক চলমান ইতিহাস, এক জীবন্ত নিদর্শন। তার চলা কখনোই শুধুই যাত্রা নয়, বরং তা হলো শ্রম, ভালোবাসা ও টিকে থাকার এক নিঃশব্দ সংগ্রাম। এই মাটির মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতেই হয়—যারা ক্লান্তিহীন, নীরব অথচ দৃঢ়চেতা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস