বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজে ধান চাষ ও ধান কাটা কেবল একটি কৃষি কার্যক্রম নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, একটি উৎসব, এবং গ্রামীণ জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ধান কাটার মৌসুম মানেই মাঠে মাঠে সোনালী ফসলের হাসি, কৃষকের মুখে তৃপ্তির ছোঁয়া, আর প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের এক উজ্জ্বল প্রকাশ।
বাংলাদেশে সাধারণত দুটি প্রধান ধানের মৌসুম থাকে—বোরো ও আমন।
আমন ধান কাটা হয় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে।
বোরো ধান কাটা হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে।
এই সময়টিতে গ্রামবাংলা এক নতুন রূপে সেজে ওঠে। কাঁচা ঘাসে শিশির, সোনালি রোদের আলো, আর দূরে বাজতে থাকা ঢাক-ঢোল যেন ধান কাটার উৎসবকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
ধান কাটা মানেই দিনভর খাটুনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাস্তে হাতে মাঠে কাজ করেন কৃষকেরা। কিন্তু ক্লান্তির মধ্যেও থাকে আনন্দ—কারণ এটি হলো বছরের পরিশ্রমের ফল ঘরে তোলার সময়। ধান কাটার পর থ্রেসার বা গরুর পায়ে মাড়িয়ে ধান ঝাড়া হয়, তারপর তা শুকানো ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
ধান কাটার সময় অনেক জায়গায় "আড়ং", "নবান্ন", বা "ফসল উৎসব" পালিত হয়। নতুন চাল দিয়ে পিঠা-পায়েস, খেজুরের রস আর গ্রামীণ গান-বাজনার আয়োজন চলে। এটি শুধু কৃষকের উৎসব নয়, এটি পুরো গ্রামের আনন্দ-উৎসব।
যদিও ধান কাটার মৌসুম আনন্দের, তবে এ সময় কৃষকদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়:
শ্রমিক সংকট ও উচ্চ মজুরি
অনিয়মিত আবহাওয়া ও বন্যা
ন্যায্য দামের অভাব
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজন প্রযুক্তির ব্যবহার, সরকারি সহায়তা ও কৃষকদের প্রতি সম্মানজনক মূল্যায়ন।
ধান কাটার মৌসুম শুধু ধান ঘরে তোলার সময় নয়, এটি বাংলার প্রাণ, বাংলার আত্মা। এই মৌসুম আমাদের শেখায় ধৈর্য, পরিশ্রম, আর প্রাপ্তির আনন্দ। প্রযুক্তি ও সংগঠিত উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যদি কৃষকের পাশে দাঁড়াই, তবে ধান কাটার এই মৌসুম আরও আনন্দময়, আরও আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস