বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা ঝিনাইদহ। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি। তবে সাধারণ কৃষিপণ্য ছাড়াও ঝিনাইদহ বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে দুটি পণ্যের জন্য— কলা ও পান। স্থানীয়ভাবে যেমন এর চাহিদা ব্যাপক, তেমনি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ঝিনাইদহের কলা ও পানের সুনাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা, হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানকার চাষিরা দেশি ও হাইব্রিড জাতের কলা চাষ করে থাকেন।
বিশেষ করে ‘সাগর কলা’ ও ‘সাবরি কলা’ এখানকার বাজারে জনপ্রিয়। সুস্বাদু ও সহজে পচন না ধরার কারণে ঝিনাইদহের কলা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। অনেক পরিবারই কলা চাষকে প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছে। এতে করে এলাকার কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে।
ঝিনাইদহের পান দেশের অন্যতম সেরা পান হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানকার ‘মিঠে পান’ বা ‘দেশি পান’ মুখে দিলে এর স্বাদ ও গন্ধে সহজেই বোঝা যায় এর মান কতটা উন্নত।
কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর এলাকায় বিশেষভাবে পানের চাষ হয়। পানের বরজগুলোতে চাষিরা নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে পানের গুণগত মান বজায় রাখেন।
ঝিনাইদহের পান শুধুমাত্র দেশের বাজারেই নয়, সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি হয়। এছাড়া বিবাহ ও সামাজিক অনুষ্ঠানেও ঝিনাইদহের পান একটি অপরিহার্য উপাদান।
ঝিনাইদহের কলা ও পান জেলার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। হাজার হাজার পরিবার এসব পণ্যের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত। স্থানীয় হাট-বাজারে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হয় শুধুমাত্র কলা ও পানের উপর ভিত্তি করে। এছাড়া পরিবহন, প্যাকেজিং, পাইকারি বিক্রি—সব ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
যদিও কলা ও পান চাষে সম্ভাবনা অনেক, তবু এই খাতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই, ন্যায্যমূল্যের অভাব এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাব। তবে সরকার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ যদি যথাযথ সহায়তা প্রদান করে, তাহলে এই খাত আরও সম্প্রসারিত হতে পারে।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হলে ঝিনাইদহের কলা ও পান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে।
উপসংহার:
‘কলা আর পান ঝিনাইদহের প্রাণ’—এ কথা শুধু প্রবাদ নয়, বাস্তবের প্রতিফলন। যুগ যুগ ধরে এই দুটি পণ্য জেলার পরিচয় বহন করে চলেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় একে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো সম্ভব। ঝিনাইদহের কৃষকের ঘামে ভেজা মাটি থেকে উঠে আসা এই ঐতিহ্য আমাদের গর্ব।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস