আনসার ও ভিডিপি (ভিডিপি) সদস্য: দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের নীরব সৈনিক
বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম ও শহরে এই বাহিনীর সদস্যরা সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তাঁরা শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বই পালন করেন না, বরং সমাজ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায়ও বড় ভূমিকা রাখছেন।
আনসার ও ভিডিপির উৎপত্তি ও ইতিহাস
আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে, যা মূলত পাকিস্তান আমলে পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক বাহিনী হিসেবে গঠিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি)। দুই বাহিনীকে একত্রে “আনসার ও ভিডিপি” বলা হয়।
সদস্যদের গঠন ও নিয়োগ
আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে দু’টি প্রধান ধারা রয়েছে:
সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য: যাঁরা গ্রামে বা শহরে নিজ নিজ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।
ব্যাটালিয়ন আনসার: যারা পেশাদারভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ও চাকরিজীবী। এরা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা, কারাগার, ব্যাংক, শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি জায়গায় নিরাপত্তা প্রদান করে।
সাধারণত পুরুষ ও নারী উভয়ই ভিডিপি সদস্য হতে পারেন। ভিডিপি সদস্য হতে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ের আবেদন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত হতে হয়।
মূল কার্যক্রম ও ভূমিকা
আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা যেসব ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন:
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা: বিশেষ করে নির্বাচন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মেলা, জাতীয় দিবস ইত্যাদি উপলক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার কাজ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা।
সামাজিক উন্নয়ন: বৃক্ষরোপণ, নারী-শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, মাদকবিরোধী সচেতনতা এবং স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ।
প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান: ভিডিপি সদস্যদের বিভিন্ন হস্তশিল্প, কৃষিকাজ, গার্মেন্টস, আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
নারী ভিডিপি: নারী ক্ষমতায়নের অনন্য দৃষ্টান্ত
নারী ভিডিপি সদস্যরা এখন গ্রামীণ নারীর জীবনমান উন্নয়ন, সহিংসতা প্রতিরোধ ও নারীর অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাঁরা পরিবার ও সমাজে সচেতনতা গড়তে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে কাজ করছেন।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও আনসার ও ভিডিপি বাহিনী অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন, তবুও তারা অনেক সময় উপেক্ষিত থাকে। তাদের সম্মানজনক পারিশ্রমিক, প্রশিক্ষণের আধুনিকায়ন ও পেশাগত উন্নয়নের সুযোগ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সরকার যদি এই বাহিনীকে আরও আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সুযোগ দেয়, তাহলে তাঁরা দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস