ভাষা আন্দোলনের চেতনা বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের অন্যতম ভিত্তি। এই চেতনার শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে, যা নতুন প্রজন্মকে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তেমনই একটি অনন্য স্থাপনা হলো হামিদুর রহমান কলেজ প্রাঙ্গনের শহীদ মিনার, যা কেবল একটি স্মারক নয়, বরং এটি স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, ইতিহাস ও সংস্কৃতির বোধ জাগ্রত করার এক প্রতীক।
হামিদুর রহমান কলেজের শহীদ মিনারটি সাদামাটা অথচ দৃষ্টিনন্দন নকশায় নির্মিত। কেন্দ্রে প্রধান স্তম্ভটি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তার পাশে রয়েছে দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট স্তম্ভ, যা জাতির ঐক্য ও সংগ্রামকে প্রতিফলিত করে। পুরো স্থাপনাটি চারপাশে খোলা প্রাঙ্গণে নির্মিত, যেখানে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জড়ো হয়।
প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষজন ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ তখন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। শহীদ মিনারটিকে কেন্দ্র করে কলেজে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ইতিহাসচর্চা ও জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে।
এই শহীদ মিনার কেবল ভাষা আন্দোলনের স্মারক নয়; এটি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের চলার পথে এক প্রেরণার উৎস। এটি শেখায় কিভাবে ভাষার জন্য জীবন দেয়া শহীদদের পথ অনুসরণ করে নিজেদের মধ্যে সততা, সাহস ও আত্মত্যাগের গুণাবলি ধারণ করা যায়।
হামিদুর রহমান কলেজ প্রাঙ্গনের শহীদ মিনার একটি স্থির স্থাপনা হলেও, এর তাৎপর্য চিরচলমান। এটি অতীতের গৌরবকে বর্তমান প্রজন্মের মনে জাগিয়ে তোলে এবং ভবিষ্যতের পথ চলায় তাদের আলোকিত করে। শহীদ মিনারটি যেন সবসময় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—মায়ের ভাষার জন্য জীবন দান ছিল শুধু আত্মত্যাগ নয়, ছিল জাতির জাগরণ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস