বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সাতজন বীর সন্তান "বীরশ্রেষ্ঠ" উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন, তাদের অন্যতম হলেন সিপাহী হামিদুর রহমান। তিনি শুধু একজন সৈনিক ছিলেন না, ছিলেন দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী এক সত্যিকারের যোদ্ধা, যিনি জাতিকে মুক্ত করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
হামিদুর রহমান ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার খোয়াই নদীর তীরে অবস্থিত খাগালছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আব্দুল ওদুদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। শৈশবে তিনি ছিলেন মেধাবী ও সাহসী প্রকৃতির।
১৯৭১ সালের আগেই তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)-এ যোগ দেন। তখনো পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। দেশজুড়ে যখন মুক্তির ডাক উঠল, হামিদুর রহমানও হয়ে উঠলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন অগ্রসেনানী।
১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর, মহম্মদপুর উপজেলার ডৌয়াতলা সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন হামিদুর রহমান। তার দলটির কাজ ছিল পাকিস্তানি ফৌজের শক্তিশালী অবস্থান ধ্বংস করা। জীবন বিপন্ন জেনেও তিনি একাই এগিয়ে যান এবং শত্রুর বাংকারে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন। তার সাহসিকতার কারণে শত্রুপক্ষের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিজয় অর্জিত হয়। তবে সেই যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।
তার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব “বীরশ্রেষ্ঠ” প্রদান করে। তার মৃতদেহ ২০০৭ সালে ভারতে সমাধিস্থ স্থান থেকে বাংলাদেশে এনে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মরণে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়ক ও স্থাপনা। তার নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাসমান, কারণ তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে একটি জাতিকে মুক্ত করা যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস