বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার অন্তর্গত এসবিকে ইউনিয়ন একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এই ইউনিয়নের অন্তর্গত বজরাপুর গ্রাম এবং তার বিখ্যাত বাওড় (প্রাকৃতিক জলাশয়) শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নয়, বরং ইতিহাস, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এসবিকে ইউনিয়ন ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর আয়তন প্রায় ২৩ বর্গকিলোমিটার। উত্তরে সাফদারপুর ইউনিয়ন, দক্ষিণে মহেশপুর উপজেলা সদর, পূর্বে কোটচাঁদপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে ফতেপুর ইউনিয়ন দ্বারা বেষ্টিত এই ইউনিয়নের ভৌগোলিক অবস্থান ২৩.৩৮৭২৭৫° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৮.৯৪৪১৬৪° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত ।
বজরাপুর বাওড় একটি প্রাকৃতিক জলাশয়, যা স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদের আবাসস্থল, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক। এছাড়া, বাওড়টি স্থানীয় কৃষকদের সেচের জল সরবরাহ করে, যা ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে।
২০২৪ সালের মে মাসে, বজরাপুর গ্রামের এক কৃষক ধানক্ষেতে সেচের জন্য খাল খনন করার সময় মাটির প্রায় চার ফুট নিচে একটি বিশাল আকৃতির পুরনো নৌকার সন্ধান পান। নৌকাটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া, এবং ধারণা করা হয় এটি শাল কাঠ দিয়ে তৈরি। এই নৌকাটি 'বজরা' নামে পরিচিত, যা ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় ও স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা নৌবিহারের জন্য ব্যবহার করতেন ।
এই আবিষ্কার স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করে এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি দল পাঠায় ।
স্থানীয়দের মতে, 'বজরা' শব্দ থেকেই 'বজরাপুর' গ্রামের নামকরণ হয়েছে। একসময় এই অঞ্চলে নৌকা ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, এবং এই নৌকাটি সেই ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষ্য বহন করে।
বজরাপুর বাওড় ও তার আশেপাশের এলাকা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং জীববৈচিত্র্য মিলিয়ে এটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। এছাড়া, সঠিক পরিকল্পনা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বজরাপুর বাওড় ও এসবিকে ইউনিয়ন ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক অনন্য সংমিশ্রণ। সঠিক পরিকল্পনা, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস