এস.বি.কে ইউনিয়ন পরিষদ
অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)
শ্রমিক সংখ্যা-৯৪ জন
বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় দারিদ্র্য বিমোচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী এখনো দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অংশ হিসেবে "অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি" (Employment Generation Program for the Poorest - EGPP) চালু করে। এ কর্মসূচির লক্ষ্য হলো মৌসুমভিত্তিক বেকারত্ব কমানো, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন।
ইজিপিপি কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে, যখন খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল দুর্বল ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান এবং তাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করা।
মৌসুমভিত্তিক (বিশেষ করে মঙ্গা বা দুর্ভিক্ষপ্রবণ সময়ে) অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অতিদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনধারা স্থিতিশীল করা।
শ্রমের বিনিময়ে আয় প্রদানের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
দুর্যোগ-পরবর্তী সময়কালে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা।
স্থানীয় সম্পদ উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নারী ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করা।
ইজিপিপির সুবিধাভোগী নির্বাচন করা হয় নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে, যেমন:
কর্মক্ষম, নিন্ম আয় বা সম্পদহীন ব্যক্তি।
জমিহীন বা সর্বোচ্চ ০.১৫ একর জমির মালিক।
সামাজিকভাবে অবহেলিত গোষ্ঠী (যেমন বিধবা, স্বামী-পরিত্যক্তা নারী)।
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তি, যারা কঠোর পরিশ্রমে সক্ষম।
যারা অন্যান্য সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নন।
ইজিপিপির আওতায় নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও মেরামত।
খাল খনন ও পুনঃখনন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার।
জলাধার পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন।
বৃক্ষরোপণ, বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কার্যক্রম।
হাঁটা পথ, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ।
এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি সঞ্চার ঘটে।
ইজিপিপি সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত হয়।
প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত দৈনিক মজুরি রয়েছে, যা সময় সময় পুনর্বিবেচনা করা হয় (সাম্প্রতিক সময়ে এটি ২০০-৩০০ টাকা দৈনিকের মধ্যে হয়ে থাকে)।
শ্রমিকদের মজুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে (মোবাইল ব্যাংকিং) সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হয়, যার ফলে দুর্নীতি কমে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়।
ইজিপিপির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে:
মৌসুমভিত্তিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সহায়তা।
অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সামাজিক নিরাপত্তা বোধের সৃষ্টি।
গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি।
নারীর আর্থিক ক্ষমতায়ন ও সামাজিক অবস্থানের উন্নতি।
দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতি ও দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা।
একটি জরিপের (বিশেষ করে ইআরডি এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে) উল্লেখ রয়েছে, ইজিপিপি সুবিধাভোগীদের প্রায় ৭০% অংশগ্রহণকারী নারী, যা নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
তবে, কর্মসূচির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে:
প্রকল্প নির্বাচনে কখনও কখনও স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব।
সময়মতো তহবিল ছাড়ে বিলম্ব।
মজুরি হারের সাথে বাজার মূল্যের সামঞ্জস্য বজায় রাখা।
কিছু এলাকায় প্রকল্পের প্রকৃত শ্রমঘন প্রকৃতি বজায় না রাখা।
দক্ষতা উন্নয়ন বা স্থায়ী কর্মসংস্থানের সাথে সংযোগের অভাব।
ইজিপিপির কার্যকারিতা আরও বাড়ানোর জন্য কিছু সুপারিশ করা যেতে পারে:
প্রকল্প নির্বাচন ও শ্রমিক তালিকায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থ ছাড় নিশ্চিত করা।
সুবিধাভোগীদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সংযোজন করা, যাতে তারা ভবিষ্যতে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে আত্মনির্ভর হতে পারেন।
প্রকল্পের সাথে ক্ষুদ্রঋণ ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় করা।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার আরও উন্নয়ন করা।
অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্যতম সফল উদাহরণ। এটি শুধু সাময়িক কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করেনি, বরং দেশের দরিদ্র জনগণের আত্মবিশ্বাস ও সম্মানবোধ বৃদ্ধি করেছে। ভবিষ্যতে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইজিপিপি বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ অভিযানে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস