বাংলাদেশের কৃষি খাতে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে নতুন নতুন ফলের চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এ ধারা অনুসরণ করে এসবিকে ইউনিয়নে ড্রাগন ফল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন, দেখতে আকর্ষণীয় এবং বাজারে চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় এই বিদেশি ফলটি এখানকার কৃষকদের মাঝে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে।
ড্রাগন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus। এটি মূলত ক্যাকটাস জাতীয় গাছ।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
ফলের বাইরের অংশ উজ্জ্বল লাল বা হলুদ
ভেতরে সাদা বা লাল পাল্প ও অসংখ্য ছোট কালো বীজ
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ: ভিটামিন C, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন
এসবিকে ইউনিয়নের জলবায়ু ও মাটি ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী:
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো
বেলে দোআঁশ মাটি এবং pH ৫.৫–৬.৫ এর মধ্যে থাকলে ফলন ভালো হয়
অতিরিক্ত পানি লাগে না, বরং সামান্য খরাপ্রবণ এলাকাতেও চাষ করা যায়
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফুল ও ফল আসে
ড্রাগন গাছ কাটিং পদ্ধতিতে (কলম) রোপণ করা হয়
সাধারণত কংক্রিট বা বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছকে ভর দেওয়া হয়
গাছ লাগানোর ১ বছর পর থেকেই ফল আসে এবং ২০ বছরের বেশি সময় ফল দিতে পারে
প্রতি গাছে বছরে ২০–৩০টি ফল ধরে, গড়ে ওজন ৩০০–৫০০ গ্রাম
১ বিঘা জমিতে প্রায় ৫০০–৬০০ গাছ লাগানো যায়
✅ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন বেশি সময় ধরে ভালো থাকে এবং বাজারে মূল্যও বেশি পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফলের বাজারদর প্রতি কেজি গড়ে ২০০–৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এক নজরে আয়:
১ বিঘা জমিতে বছরে ফলন হয় প্রায় ৩,০০০–৪,০০০ কেজি
আনুমানিক আয়: ৬–১০ লক্ষ টাকা (পরিচর্যার মান, জাত ও বাজারমূল্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)
চাষের খরচ তুলনামূলকভাবে কম (প্রধানত এককালীন খুঁটি তৈরি ও চারা লাগানোর ব্যয়)
এসবিকে ইউনিয়নের কিছু প্রগতিশীল কৃষক ইতোমধ্যে:
৫–১০ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন
ইউটিউব, কৃষি অফিস, ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে জ্ঞান নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করছেন
অনেকে জৈব ড্রাগন ফল বাজারজাত করছেন উচ্চ মূল্যে
পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে বাগান খোলা রেখেছেন দর্শনার্থীদের জন্য
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে চারা বিতরণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে
কিছু এনজিও ও ব্যাংক কৃষিঋণ প্রদান করছে নতুন চাষে উৎসাহ দিতে
প্রশিক্ষণ, বাজার সংযোগ ও পরামর্শ সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে
চারা সংগ্রহের অভাব এবং অধিক দাম
গাছের গোড়ায় পচন (Root Rot), ছত্রাক ও পোকামাকড়ের আক্রমণ
বাজার অবকাঠামো এখনো সংগঠিত নয় – পাইকাররা কৃষককে কম মূল্য দিতে চায়
ঠান্ডা বা অতিবৃষ্টিতে ফুল ঝরে পড়ার ঝুঁকি
ড্রাগন প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি (জ্যাম, জেলি, জুস) গড়ে তোলা যায়
রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং মালয়েশিয়ার বাজারে
ইউনিয়ন বা উপজেলা ভিত্তিক ড্রাগন চাষি সমিতি গঠন করে বাজারে একসাথে প্রবেশ সম্ভব
শিক্ষিত তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়লে এগ্রো-ট্যুরিজম উন্নয়ন সম্ভব
এসবিকে ইউনিয়নে ড্রাগন চাষ শুধু একটি ফলের চাষ নয়—এটি একটি উদ্ভাবনী ও লাভজনক কৃষিকৌশল, যা অল্প জমিতে অধিক আয় নিশ্চিত করে। ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ এবং বাজার সহায়তা পেলে ড্রাগন চাষ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS