বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মতোই ইতিহাসের গর্ব বহন করে চলছে অনেক পুরনো স্থাপনা। তেমনি এক প্রাচীন নিদর্শন হলো এসবিকে ইউনিয়নের সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি। মেহেরপুর জেলার অন্তর্গত এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি একসময় ছিল আভিজাত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক চেতনার কেন্দ্রবিন্দু।
সুন্দরপুর জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল সম্ভবত ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে। সেই সময়ের রাজকীয় ও মুঘল স্থাপত্যরীতির প্রভাব এখানে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। লাল ইট, মোটা দেয়াল, খোলা বারান্দা, আর কারুকার্যময় কাঠের দরজা-জানালার মধ্য দিয়ে জমিদার পরিবারের ঐশ্বর্য ধরা দেয়। বাড়ির মূল ফটক, সভা কক্ষ, গোডাউন, অতিথিশালা ও ঠাকুরঘর প্রভৃতি এখনও ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এই জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি বিস্তৃত ইতিহাস। জমিদার পরিবারটি ছিল শিক্ষিত ও প্রভাবশালী। তারা শুধু কর আদায় করত না, বরং এলাকার শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দরিদ্র মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। ব্রিটিশ আমলে তাদের অনেক সদস্য রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছিলেন এবং পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনেও সহায়তা করেছেন বলে কথিত রয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জমিদার বাড়িটি আজ অনেকটা উপেক্ষিত। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বাড়ির কিছু অংশ ইতোমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে এখনো স্থানীয় লোকজন ও ইতিহাসপ্রেমীরা এটিকে একবার দেখতে যান। অনেকেই এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
যদি সরকারের পর্যটন বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসন এই জমিদার বাড়িটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে, তবে এটি হতে পারে একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। শিক্ষার্থীরা ইতিহাস জানতে পারবে, আর আগ্রহীরা ফিরে পাবে অতীতের বাংলাদেশের এক বাস্তব চিত্র।
সুন্দরপুর জমিদার বাড়ি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি সময়ের কাহিনি, যা আজও ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে আমাদের ডাকে ফিরে যেতে সেই ঐতিহ্যের যুগে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS